চাকরির পরীক্ষায় প্রতিবেদন লিখবেন যেভাবে

লেখক: তারিক মনজুর, শিক্ষক, বাংলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

চাকরির লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নে অনেক সময় প্রতিবেদন লিখতে বলে। প্রতিবেদন অনেক রকমের হয়ে থাকে। তবে পরীক্ষায় এমন প্রতিবেদন লিখতে বলে যেগুলো সংবাদপত্রে প্রকাশের উপযোগী। বিসিএসের লিখিত পরীক্ষায় বাংলা বিষয়ে একটি প্রশ্ন হয় চিঠিপত্রের ওপর। এই প্রশ্নে প্রায়ই সংবাদপত্রের প্রতিবেদন লিখতে দেয়। এসব প্রতিবেদন কীভাবে লিখলে ভালো নম্বর পাওয়া যায়, তা আজ আলোচনা করা হচ্ছে।

আরও দেখুন: বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক পদের এমসিকিউ পরীক্ষার সময়সূচি ঘোষণা

প্রশ্নের নমুনা

শুরুতে কিছু পুরোনো প্রশ্নের নমুনা দেখা যাক:

  • বাল্যবিবাহের কুফল ও বাল্যবিবাহ রোধে করণীয় সম্পর্কে নির্দেশনাসহ দৈনিক সংবাদপত্রে প্রকাশের উপযোগী একটি প্রতিবেদন প্রস্তুত করুন।
  • বাংলাদেশে পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণ ও পরিণাম বর্ণনা প্রসঙ্গে এর প্রতিকারে পাঁচটি করণীয় বিষয় উল্লেখ করে সংবাদপত্রে প্রকাশের উপযোগী একটি প্রতিবেদন রচনা করুন।
  • ‘সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলন’ বিষয়ে প্রকাশের উপযোগী একটি প্রতিবেদন লিখুন।
  • বাঙালি সংস্কৃতির উন্নয়নে গণমাধ্যমের করণীয় সম্পর্কে পরামর্শ দিয়ে পত্রিকায় প্রকাশের জন্য একটি প্রতিবেদন রচনা করুন।

লেখার সময় ও প্রতিবেদনের শব্দের সংখ্যা

দৈনিক পত্রিকায় প্রতিদিন অনেক প্রতিবেদন ছাপা হয়। এসব প্রতিবেদনের জন্য শব্দের সংখ্যা নির্দিষ্ট নয়। পত্রিকায় ২০০ থেকে ১০০০ শব্দের প্রতিবেদন দেখা যায়। প্রতিবেদনের সঙ্গে ছবিও ছাপে পত্রিকাগুলো। তবে পরীক্ষার খাতায় লেখা প্রতিবেদনে ছবি দিতে হয় না। এমনকি খাতায় উত্তর লেখার জন্য প্রতিবেদনের শব্দের সংখ্যা নিয়েও বিশেষ ভাবার দরকার নেই। পরীক্ষার হলে প্রশ্ন অনুযায়ী সময় বরাদ্দ করে উত্তর করতে হয়। সে ক্ষেত্রে প্রতিবেদনের জন্য বরাদ্দ করা সময় ধরে উত্তর লিখবেন। বিসিএস পরীক্ষার ক্ষেত্রে এ ধরনের একটি প্রতিবেদন লেখার জন্য সময় পাবেন মোটামুটি ১৭ থেকে ১৮ মিনিট এবং এর আয়তন হতে পারে সব মিলিয়ে ২ পৃষ্ঠা।

প্রতিবেদনের ধরন

প্রতিবেদন লেখার নিয়ম জানার আগে কয়েক ধরনের প্রতিবেদন সম্পর্কে ধারণা নেওয়া যাক। যেমন কোনো পোশাক কারখানায় আগুন লাগলে তদন্ত কমিটি হতে পারে। সেই তদন্ত কমিটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে একটি প্রতিবেদন পেশ করে। এ ধরনের প্রতিবেদনকে বলা হয় তদন্ত প্রতিবেদন। আবার কোনো প্রতিষ্ঠানের এক বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব কিংবা গৃহীত কার্যক্রম তুলে ধরে প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হতে পারে। একে বলা যায় বার্ষিক প্রতিবেদন। অনেক সময় কোনো এলাকায় বৃক্ষমেলা কিংবা স্কুল-কলেজের মাঠে বইমেলা হয়। এই খবর প্রতিবেদন আকারে পত্রিকায় প্রকাশ করা যায়। একে বলে সংবাদ প্রতিবেদন। তদন্ত প্রতিবেদন লেখেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা, বার্ষিক প্রতিবেদন লেখেন প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত কর্মকর্তারা এবং পত্রিকায় প্রতিবেদন লেখেন সাংবাদিকেরা। তবে পরীক্ষার প্রশ্নে তদন্ত প্রতিবেদন, বার্ষিক প্রতিবেদন বা পত্রিকার প্রতিবেদন এগুলোর কোনোটিই লিখতে দেওয়া হয় না।

একটি নমুনা

পরীক্ষার খাতায় প্রতিবেদন লেখার জন্য শুরুতে সংবাদপত্রের সম্পাদক বরাবর একটি চিঠি লিখতে হয়। দ্বিতীয় অংশে মূল প্রতিবেদনটি লিখতে হয়। সম্পাদক বরাবর লেখা চিঠির শুরুতে তারিখ দিতে হয় আর নিচের স্বাক্ষর অংশে নিজের নাম ও ঠিকানা আড়াল করতে সাংকেতিক নাম ও সংক্ষিপ্ত ঠিকানা ব্যবহার করতে হয়। প্রথম অংশ শেষ হলে একটি শিরোনাম দিয়ে দ্বিতীয় অংশ শুরু করতে হবে। একটি নমুনা দেখা যাক:

৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২
সম্পাদক,
‘ক’ পত্রিকা
কারওয়ান বাজার,
ঢাকা।

বিষয়: বাল্যবিবাহ বিষয়ে প্রতিবেদন ছাপানোর আবেদন।

জনাব,
আপনার বহুল প্রচারিত পত্রিকায় প্রকাশের জন্য একটি প্রতিবেদন পাঠালাম। ‘বাল্যবিবাহের কুফল এবং বাল্যবিবাহ রোধে করণীয়’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করলে খুশি হব।

নিবেদক

ক হোসেন
৩/২ মালিবাগ, ঢাকা।

বাল্যবিবাহের কুফল ও বাল্যবিবাহ রোধে করণীয়

ক হেসেন,
বাংলাদেশে ১৯২৯ সালে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন হয়, কিন্তু আজ প্রায় ১০০ বছর পার হলেও বাল্যবিবাহ পুরোপুরি বন্ধ করা যায়নি। দুঃখজনক ব্যাপার হলো, অভিভাবকের ইচ্ছায় অধিকাংশ বাল্যবিবাহ হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে অভিভাবকেরা বিয়ের জন্য চাপও প্রয়োগ করছেন। ভয়াবহ পরিণতির শিকার হচ্ছেন তাঁদেরই সন্তানেরা, বিশেষ করে, কন্যাশিশুরা। স্কুলগামী শিক্ষার্থীর বিয়ে হওয়ার কারণে তারা আর পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে না। অল্প বয়সে সন্তানের মা হওয়ার কারণে মেয়েরা স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। একই সঙ্গে নবজাতক শিশুটিকেও স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলছে।

বাল্যবিবাহ রোধের জন্য এখন দেশে সচেতনতা বেড়েছে। আশার কথা, স্কুলের সহপাঠীরাও অনেক বিয়ে ভেঙে দিতে সক্ষম হয়েছে। বাল্যবিবাহ রোধের জন্য সবার আগে দেশে শিক্ষার হার বাড়াতে হবে। মানুষ যত শিক্ষিত হবে, তত এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব হবে। তা ছাড়া অর্থনৈতিকভাবেও আমাদের স্বাবলম্বী হতে হবে। কারণ, অভাবের কারণে মা–বাবা তাঁদের কন্যাসন্তানকে অল্প বয়সে বিয়ে দিতে বাধ্য হন।

কিছু সুপারিশ

  • শিক্ষার হার বাড়ানো।
  • সব পর্যায়ে নারীশিক্ষা সম্পূর্ণ অবৈতনিক করা।
  • সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
  • বাল্যবিবাহের উদ্যোক্তাদের শাস্তির আওতায় আনা।
  • প্রকৃত জন্মসনদ দেখে কাবিননামায় জন্মতারিখ লেখার ব্যবস্থা করা ইত্যাদি।

বাল্যবিবাহ রোধে সরকারিভাবে কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সবার সম্মিলিত উদ্যোগে বাল্যবিবাহ রোধ করা সম্ভব হবে বলে আমরা মনে করি।

সংবাদপত্রের চিঠি ও প্রতিবেদনের পার্থক্য

সংবাদপত্রে চিঠি লেখার ক্ষেত্রে মূল বিবরণ লিখতে হবে একটি বা দুটি অনুচ্ছেদে। চিঠি ১৫০ শব্দের মধ্যে হতে হবে। আর প্রতিবেদনের মূল বিবরণ লিখতে হবে কয়েকটি অনুচ্ছেদে। শব্দের সংখ্যা ২০০ থেকে ২৫০। সংবাদপত্রে চিঠির ক্ষেত্রে মূল বিবরণে কোনো উপশিরোনাম বা সাবহেডিং থাকবে না। আর প্রতিবেদনের ক্ষেত্রে উপশিরোনাম বা সাবহেডিং দিয়ে লিখলে ভালো হবে।

সতর্কতা

  • নতুন পৃষ্ঠায় প্রশ্নের উত্তর লেখা শুরু করতে হবে।
  • নিজের নাম ও ঠিকানা সম্পূর্ণ গোপন রাখতে হবে।
  • সম্পাদকের কাছে চিঠির পরপরই প্রতিবেদনের মূল অংশ লেখা শুরু করা যায়।
  • মূল প্রতিবেদনে নাম আরেকবার লিখতে হবে।
  • প্রতিবেদনে কিছু তথ্য দিতে পারলে ভালো হয়।
  • কোনো খাম আঁকার দরকার নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button